Rose Good Luckভালোবাসার সাতকাহন (ধারাবাহিক গল্পঃ পর্ব-৬) Rose Good Luck

লিখেছেন লিখেছেন মামুন ১৮ অক্টোবর, ২০১৪, ১০:২৪:৪৬ রাত

Good Luckবিউসে।

নিজেদের সাহিত্যচর্চার আড্ডাস্থলে বসে আছে লেখক মিনার মাহমুদ।

একটা নতুন লিখা মাথায় এসেছে। কিন্তু নামাতে পারছে না। গল্পটিতে নারী চরিত্রটিকে কেন জানি যেভাবে চাচ্ছেন, সেভাবে ফুটিয়ে তুলতে ব্যর্থ হচ্ছেন। সমস্যাটা কোথায় সেটাই বুঝে আসছে না। দু'জন নারীকে ঘিরে একজন পুরুষের ভালোলাগাগুলোর টুকরো টুকরো অংশীদারিত্ব... সমবন্টন।

এরকম আদতেই কি বাস্তবে সম্ভব?

একই সাথে হৃদয়ের সমান দুটো ভাগ হতে পারে কি?

চকিতে নিজের কথাই মনে পড়ল। তিনি ও তো একই সাথে দু'জন নারীকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছেন। সেভাবে হৃদয়ের ভালোলাগাগুলোকে ওদের দুজনকে সমভাবে দিতে পেরেছেন কি?

রেখা। নিজের অর্ধাঙ্গিনী। যে তার সকল অপুর্ণতা জেনেও তাকে পাগলের মত ভালোবেসে চলেছে। এতগুলো বছর একসাথে পথ চলায় তাকে সাহায্য করছে।

আর লতা? তার সাথে মিনারের সম্পর্কটা আসলে কেমন? আদতেই কি কোনো সম্পর্ক রয়েছে? আর থাকলেও তাকে কি নাম দেয়া যায়?

রেখা যদি এই সম্পর্কের কথা জানে তবে কেমন রিয়্যাক্ট করবে?

খুব সুন্দরই তো চলছিল রেখা আর তার টক-ঝাল-মিষ্টি সম্পর্কের ভিতরের জীবনটি। এরই মাঝে লতা যে কিভাবে চলে এসে জীবনটাকে এরকম ক্রিটিক্যাল পর্যায়ে নিয়ে আসবে, ভেবেছিলেন কি কখনো?

লিখার প্লটটিকে মাথা থেকে নামিয়ে একেবারে শূন্য হতে চাইলেন।

চাইলেই কি পরম শূন্য হওয়া যায়। লতা নামের একজন মাথায় থেকেই গেল। মিনার মাহমুদ বেশ কিছুদিন আগে ফিরে গেলেন। লতার সাথে প্রথম পরিচয় এবং প্রথম পদস্খলনের সেই দিনটিতে... ...।

... ... ...

আটজনের টেবিলে মুখোমুখী বসে আছে দুজন।

লতা।

মিনার মাহমুদ।

লতার মুগ্ধ শ্রবণে মিনার মাহমুদের নিজের লেখা না, ওমর খৈয়াম। ভরাট গলার আবৃত্তি।

মিনার মাহমুদের মুগ্ধ চোখে লতার মুগ্ধ দুই চোখ।

আর সবাই এখনো আসেনি। আসবে।

লেখক লিখে যে সুখ পায় তার চেয়ে আরো সুখ পায় ভক্তের ভক্তিতে। আর যদি হয় লতার মত পরিপাটী রাবীন্দ্রিক কেউ।

লতাও লিখে। কিন্তু লেখার চেয়ে বেশি এক্সপার্ট মজলিশে মনোযোগ কাড়তে। শুধু টিপটপ পোশাকের জন্য না, কথার ঢং, আদুরে স্বর, পারফিউমের মদিরতা, খোলা চুলে ফুলের শোভা....

মনোহারিনী।

লেখক চার লাইন কবিতার পর মেমোরীতে আর কোন উপযুক্ত কথা খুঁজে পেলেন না।

সুবেশী সুভাষিনী লতা তার সময়টা কাজে লাগালো। এবং লেখক কিছুক্ষণের মধ্যেই রাজী হয়ে গেলেন তার মোবাইল নাম্বার, ফেইস বুক আইডি এবং বাসার ঠিকানা দিতে। সাথে নিকটতম ছুটির দিনে কিছু নামী দামী প্রকাশকের সাথে একটা ছোটখাটো চায়ের আসরে লতার দাওয়াত ও নিশ্চিত হলো।

লেখকও অন্য সবাই আসতে আসতে কোন কারণ তৈরী করে লতার পাশের চেয়ারটা দখল করলেন।

ফল স্বরূপ এক ঘোর বৃষ্টির দিনে দুজন এক রিক্সায় পাশাপাশি বসে ভিজলেন। এবং ঘন্টাখানেকের রিক্সাভ্রমণ শেষ হবার আগেই...

মোবাইলটা বেজে উঠতেই ভাবনার ঘোর কেটে গেলো। একটু বিরক্ত হয়ে মোবাইল হাতে নিলেন। ডিসপ্লেতে ভেসে ওঠা নামটি সেই বিরক্তিকে আরো একটু বাড়িয়ে দিল।

... ... ...

নিজের বাসায় রুমা এখন একা।

রায়হান মিতুকে নিয়ে ক্যাম্পাসে গিয়েছে। বাপ-বেটি ইদানিং এভাবেই বিকেল বেলা ঘুরতে বের হয়। রুমাকেও সেধেছিল যাবার জন্য। কিন্তু কিছু কাজ বাকি ছিল ঘরের। আর শরীরটাও ভালো লাগছিল না। কিন্তু সে কথা বলে ওদের দু'জনের বেড়ানোটা মাটি করতে ইচ্ছে হল না।

জানালা দিয়ে রায়হান আর মিতুকে হেঁটে হেঁটে চলে যেতে দেখে।

খুব ভালো লাগে।

ইদানিং ভালোলাগাগুলো কেমন যেন দূরে দূরে থাকে। মানুষের জীবন সব সময় একই রকম কেন থাকে না?

কেন অতীত সব সময়েই ভালোলাগার ভান্ডার হয়ে থাকে?

বর্তমানকে নিয়ে কেন সবাই ১০০ ভাগ সন্তুষ্ট থাকে না? ভবিষ্যতের দিনগুলোতে অতীতের সেই দিনগুলো ফিরে আসুক এটাই মন কেন চায়?

জানে না, সে জানে না।

জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকতে থাকতে রুমার মনের ভিতরের অন্য একটি জানালা খুলে যায়। সে সেখান দিয়ে ধীরে ধীরে প্রবেশ করে... অনেক গভীরে যেতে চেষ্টা করে... ... বিয়ের আগেকার সেই নস্টালজিক সময়গুলোতে চলে যায়।

... ... ...

সেদিন সকাল থেকেই ওর ভাল লাগছিল না।

ইদানিং ভাললাগাটার বড্ড আকাল যাচ্ছে ওর জীবনে।

লনে দাড়ালে পুরো আকাশটাকে দেখা যায়। নীল আকাশে সাদা মেঘের ঊড়ে যাওয়া দেখতে খুব ভাল লাগে। মনে হয় সে ও ঐ মেঘের সাথে উড়ে যাওয়া এক মেঘবালিকা।

মেঘবালিকা!

হ্যা, এই নামটি ই ওর নিজের জন্য পছন্দ হল। আজ থেকে নিজেকে সে এই নামে ডাকবে। এরপর অন্য কেউ ওকে কি নাম দিবে তার কি ঠিক আছে? কোথাকার কোন এক অপরিচিতর সাথে ওর বিয়ে ঠিক হতে যাচ্ছে। এগুলো বড়দের ব্যাপার। তার মামা একদিন অফিস থেকে এসে একটি ছবি ওর মামীর কাছে দিয়ে বলেছিলেন, ' এটা রুমাকে দেখাও। কাল বিকেলে এই ছেলেকে দেখতে যাবে তুমি ওকে সহ।' সেখানে একবার শুধু পরোক্ষভাবে ওর মত চাওয়া হল। আর মামার মতের বিরুদ্ধে যাওয়া কি বাসার কারো পক্ষে সম্ভব ? এটা ভয়ে নয় শুধু। এখানে আরো অনেক কিছু জড়িয়ে আছে। সেখানে শ্রদ্ধার চেয়ে ভালবাসার পারসেন্টেজই বেশী।

ছবিটি দেখেছিল।

একজন রাজপুত্র?

ওর কল্পনার?

এই ২২ বছরের জীবনটায় এখনো পর্যন্ত বাস্তবে কাউকে তেমনভাবে ভাল লেগেনি। কলেজ জীবনে বান্ধবীদের সাথে সহপাঠী ছেলেরা থাকলেও ওদের সাথে তেমনভাবে বিশেষ ভাললাগা নিয়ে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেনি।

রাজপুত্রকে (আপাতত এই নামই দিলো সে) সে কয়েকবার সামনা সামনি দেখেছে।এখন ছবিটি দেখে মনে পড়ছে। সে ও ওর মামার বন্ধুর ছেলে। পারিবারিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আগে দেখেছে। তবে সেভাবে পরিচয় হয়নি। কিন্তু যতটুকু দেখেছে খুব ভাল না লাগলেও একেবারেই যে খারাপ লেগেছে, তাও না। কেমন একটা শিশুসুলভ মায়াবি চেহারা। কবিদের ভিতরে এরকম দেখা যায়।

একটু মনে মনে হেসে নিল। ক’জন কবিকে সে দেখেছে? সামনা সামনি? তবে সে নিজেও যে একজন কবি, সেটা ভালই জানে। তার অখন্ড অবসর কাটে কবিতা লিখে। তবে কাউকে জানানোর মত স্কোপ তার নেই।

মনের গভীরে তার একটা স্বপ্ন আছে। বিশাল একটা প্রান্তর। মেঘমুক্ত নির্মল আকাশ। সাদা মেঘবালিকাদের দ্রুত সঞ্চরণ। বাতাসের তার মাথার চুল উড়ে এলোমেলো। কিছু চুল এসে মুখকে ঢেকে দিচ্ছে। এই অবস্থায় সে তার মনের ভিতরে যে অচেনা রাজপুত্রের ছবি আঁকা আছে, সে এলো। সবুজ ঘাসের উপর বসে থাকা মেঘবালিকার পাশে এসে নীরবে বসল। কোনো কথা নাই। নীরবতাই যেন কত কিছু বলে দিচ্ছে! দুজনের হৃদয়ের শব্দ ব্যাকগ্রাউন্ডে বেজে চলেছে। নীরব থেকেই দুজনের মনের কথা জানা হয়ে গেল। একসময় রাজপুত্র তার ঘাড়ে হাত রাখল, তার মুখটা নিজের দিকে ফিরাল। প্রচন্ড বাতাসে ওর মুখের উপর ঢেকে রাখা রেশমের মত চুলগুলোকে আলতো করে সরিয়ে গভীর ভাবে চোখে চোখ রাখল। রাজপুত্রের জোড়া ভুরু ও কালো চোখের ভিতর সে হারিয়ে যেতে থাকল। অস্ফুটে শুধু রাজপুত্রকে বলতে পারল; ‘এতোদিন কোথায় ছিলে’!

কিন্তু এ সবই শুধু তার কল্পনা। বাস্তবে ঐ রকম প্রান্তরে এখনকার রাজপুত্রকে নিয়ে এই ভাবে সময় কাটানো কল্পনাই করা যায় না। বাস্তবের এই রাজপুত্রের সাথে বিয়ের পরে কল্পনার সেই প্রান্তরটা থাকবে কিনা তার নিশ্চয়তা আছে কি? একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে। বিয়ের পরে ওর নিজের মত করে রোমান্সটা ও মনে হয় করা হবে না!

লনে গিয়ে আকাশের পানে তাকিয়ে থাকে মেঘবালিকা! ওর মত আরো কিছু মেঘবালিকাদের ছোটাছুটি উপভোগ করতে থাকে। কিন্তু আকাশের বালিকাদের মত এতটা উচ্ছল নয় সে। তার ডানাটা যে কেটে ফেলার যোগাড়যন্ত্র চলছে...

উড়বার তার বড় শখ!!! Good Luck

(ক্রমশঃ)

বিষয়: সাহিত্য

১০২১ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

275791
১৮ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১১:০৪
দিশারি লিখেছেন : ভাইয়া, আপনার লেখাগুলো আমাকে কেবলই ভাবনার জগতের দিকেই টেনে নিয়ে যায়।
খুব সুন্দর হয়েছে।
১৮ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১১:১৭
219707
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ।
প্রথম মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অভিনন্দন!
এটি একটি ধারাবাহিক গল্প যা বেশ কয়েকটি পর্বে শেষ হবে ইনশা আল্লাহ। তাই সবগুলো পর্ব পড়লেই লিখাটি সম্পর্কে কিছু একটা বলা যাবে। আশা করব বিগত ৫টি পর্বও আপনি পড়বেন এবং আগামি গুলোও।
সুন্দর অনুভূতি রেখে যাবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Good Luck Good Luck
১৮ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১১:২৮
219711
দিশারি লিখেছেন : ইনশা আল্লাহ্‌
275839
১৯ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০২:৪৯
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : সুন্দর এবং প্রানবন্ত লিখাটির শুকরিয়া! শুভকামনা রইলো Good Luck
১৯ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৭:৩১
219789
মামুন লিখেছেন : আপনার ভালো লাগার অনুভূতি রেখে গেলেন, সেজন্যও অনেক অনেক ধন্যবাদ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Good Luck Good Luck
275851
১৯ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৩:৫২
কাহাফ লিখেছেন :
অনুভব-অনুভূতির তীব্রতা ভাল লাগার উপলব্ধিতাই ছড়িয়ে যায় শুধু- আপনার নান্দনিক লেখনী পঠনে....।
Rose Rose Rose
১৯ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৭:৩২
219791
মামুন লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ কাহাফ ভাই ভালোলাগার অনুভূতি রেখে যাব্র জন্য।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Good Luck Good Luck
275907
১৯ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১০:১০
ফাতিমা মারিয়াম লিখেছেন : বরাবরের মতই সুন্দর। ধন্যবাদ Rose Rose Rose
১৯ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১০:৫০
219843
মামুন লিখেছেন : ভালোলাগার অনুভূতি রেখে গেলেন, সেজন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Good Luck Good Luck
275946
১৯ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ১২:৪৯
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : আমি কিছু কইতাম না!
১৯ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০১:৫৬
219871
মামুন লিখেছেন : আপনি কিছু বলবেন না এইজন্য যে, আমি সবগুলো পর্ব এক সাথে আবার পড়ে মন্তব্য করবেন।
ধন্যবাদ, কিছুই না বলার অনুভূতি রেখে যাবার জন্য।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Good Luck Good Luck
276151
১৯ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১১:০১
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ভালো লাগা রেখে গেলাম!
২০ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৭:৪৫
220163
মামুন লিখেছেন : ভালোলাগার অনুভূতি রেখে গেলেন, অনেক খুশী হলাম।
ধন্যবাদ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Good Luck Good Luck
276411
২০ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৫
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..


Rose Waiting

Praying
২০ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০৩
220357
মামুন লিখেছেন : ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..
অনুভূতি রেখে যাবার জন্য জাজাকাল্লাহ।Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File